Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধে হাকিমপুর

 

মুক্তিযুদ্ধে হিলি সম্মুখ সমরের সংক্ষিপ্তইতিহাস

 

হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশল গত কারণে পাকহানাদার বাহিনীর নিকট অত্যমত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ বিবেচনায় এই অঞ্চল দখল করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে হানাদার বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩য় ইষ্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন এর আলফা কোম্পানী ও ছাত্র-জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রিমুখি আক্রমন করে হানাদার বাহিনী। তাদের প্রচন্ড আক্রমনে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্র-ভঙ্গ হয়ে ভারতের হিলির বকশীগঞ্জ আমবাগানে অবস্থান নেয়। এই যুদ্ধে ৩ ইষ্টবেঙ্গলের ৬ জন শাহাদত বরণ করেন। এই অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে চারিদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাকিস্থানি বাহিনী ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কনক্রিটের ভাস্কর নির্মাণ করত: এখানে খুবই জোরালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনী সেনারা প্রায় পাশ্ববর্তী এলাকার নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বাঙ্গালীদেরকে ধরে এনে এখানে নির্মল নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী সহ যৌথবাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাটি উৎখাত করার জন্য প্রচন্ড আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমনের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর গোলা বর্ষণ করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে পারেনি। বরং এই দিনে মিত্রবাহিনীর অনেক সৈন্য শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডিয়ারের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অবিরাম আক্রমন চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে এই হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়।

শাহাদত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর সদস্যগনের আত্মত্যাগের প্রতি জাতীর শ্রদ্ধার নিদর্শণ স্বরম্নপ আমাদের এই স্মৃতিস্তম্ভ ‘‘সম্মুখ সমর’’।

 

 

আজ ১১ ডিসেম্বর, হিলি হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৭নং সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি শত্রম্নু মুক্ত হয়। এ সময় স্থানিয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্রবাহিনীর ৩৫৭ জন শাহাদত বরণ করেন। দিবসটি পালনে সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, ১৯ এপ্রিল ঘোড়াঘাট ও পাঁচবিবি থেকে পাকবাহিনীরা গুলি বর্ষন ও অগ্নি সংযোগ করতে করতে এসে হিলিতে ত্রাসের সৃষ্টি কায়েম করে এবং হিলি আক্রমন করতে থাকে। এ অবস্থায় ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল হিলিতে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরম্ন হয়। এ সময় ৭নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন দলের ৬ জন সদস্য শহীদ হন এবং ক্যাপ্টেন আনোয়ার দলবলসহ ভারতের বকশীগঞ্জে অবস্থান নিয়ে সেখানে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের বালুরঘাট ট্রানজিট ক্যাম্পে তালিকাভূক্ত করে পতিরামে ট্রেনিয়ের জন্য পাঠানো হয়। ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও তার দলের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বালুরঘাটের কামারপাড়ার ক্যাম্পে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও অধ্যাপক আবু সাইদ এর নেতৃত্বে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সু-সংগঠিত করা হয়। ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্নভাবে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে।

হাকিমপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী জানান, পাকবাহিনী হিলির অদুরে ছাতনী গ্রামে শক্ত ঘাটি স্থাপন করে আশ পাশে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে তারা ভারী অস্ত্র-সস্ত্র মজুত করে মুহাড়াপাড়ায় বেশ কয়েকটি বাংকার খনন করে ট্র্যাংক নিয়ে অবস্থান নেয় এবং খন্ড খন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সময় পাকবাহিনীর সাথে হিলির বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোসত্মফা হোসেন, একরাম উদ্দিন, বানিয়ালের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুরের মনিরউদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।

তিনি আরও জানান, মুহাড়াপাড়া এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর আত্মত্যাগের প্রতি জাতীর শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরম্নপ সেখানে স্মৃতিসত্মম্ভ ‘সম্মুখ সমর’ দীর্ঘ ৪২ বছর পর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ফলকে শহীদদের নাম অমর্ত্মভূক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিয়ার রহমান জানান, ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন দেয়। ফলে হিলিতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাথে পাক হানাদারদের মধ্যে প্রচন্ড সম্মুখ যুদ্ধ শুরম্ন হলে ভারত সীমামত্ম ঘেঁষা মুহাড়াপাড়ায় পাকাবাহিনী কয়েকটি ব্যাংকার করে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীরাও সু-সংঘঠিত হয়ে ১০ ডিসেম্বর সেখানে আকাশ পথে ও স্থলপথে একযোগে হামলা চালায়। সেখানে প্রচন্ড যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পরাসত্ম ও নিহত হয়েছে ভেবে ১১ ডিসেম্বর ভোরে এইপথ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীরা বিজয় উলস্নাস করতে করতে ভারতে ফিরে যাচ্ছিল। এ সময় পাকবাহিনী তাদের উপর নির্বিচারে হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্রবাহিনীর ৩৫৭ জন শাহাদত বরণ করেন। শত্রম্নু মুক্ত হয় হিলি অঞ্চল।

এদিকে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সমত্মান কমান্ড এর হাকিমপুর শাখার সভাপতি সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম জানান, দিবসটি পালনে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সমত্মান কমান্ড এর ব্যানারে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টায় একটি শোভাযাত্রা নিয়ে সম্মুখ সমরে পুস্পসত্মবক অর্পণ করা হবে। সেখানে স্থানিয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

 

হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশলগত কারনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিবেচনায় এ অঞ্চল দখল করার জন্য তারা মারিয়া হয়ে উঠে । ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্ঠা চালায় । এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে হানাদার বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩য় ইষ্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার আলফা কোম্পানী ও ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রিমূখী আক্রমন করে। হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমনে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে সন্ধ্যার দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বকশীগঞ্জ আম বাগানে অবস্থান নেয়। এই যুদ্ধে ৩ ইষ্ট বেঙ্গলের ৬ জন সৈনিক শাহাদত বনণ করেন । এ অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে চারদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

পাকিস্তানী বাহিনীর ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কংক্রিটের বাঙ্কার নির্মান করত, এখানে খুবই   জোরালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনীর সেনারা প্রায়ই পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারী ধর্ষন, লুটতরাজ , অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বাঙ্গালীদেরকে ধরে এনে এখানে নির্মম নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাটিঁ উৎখাত করার জন্য প্রচন্ড আক্রমন চালানো হয়। এই আক্রমনের সময় ভারতীয়  বিমান বাহিনী গোলা বর্ষন করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথরেম ধ্বংস করতে পারেনি। বরং এদিন মিত্রবাহিনীর অনেক সৈন্য শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডের নের্তৃত্বে যৌথবাহিনী অবিরাম আক্রম চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনাদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে এই হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়।

শাহাদত বরনকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর সদস্যগণের আত্নত্যাগের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এই স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়।